বরিশালে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ: এমপি শাহে আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশালে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ: এমপি শাহে আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ

বরিশালে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ: এমপি শাহে আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ

বরিশালে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ: এমপি শাহে আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় ‘৭১-এ প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্বজনদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের প্রকৃত ঘটনা জানতে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে তথ্য দিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, শিক্ষা সচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বরিশালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমসহ সংশ্লিষ্টদের নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দত্ত এ নোটিশ পাঠান।

 

 

নোটিশে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা ও জমি দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সচিত্র প্রতিবেদন নোটিশে সংযুক্ত করা হয়।

 

 

প্রতিবেদনে বলা হয়,বরিশালের বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহে আলমের উপস্থিতিতে ওই জমি দখল করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা ও তার স্বজনরা। ওই সংসদ সদস্য ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

 

 

এ বিষয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা মেঘনা গুহঠাকুরতা তার এলাকার সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘গতকাল (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪.৩০টার দিকে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম দাঁড়িয়ে থেকে আমার পাঁচ শতাংশ জমি, যাহার বাজারমূল্য কোটি টাকা, তা বালিকা বিদ্যালয়ের নামে দখল করে নিয়েছে। তিনি বর্তমানে বানারীপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এই জমির অংশ থেকে দশমিক আট শতাংশ জমি আমরা বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জন্য সরকারকে দিয়েছি এবং ডিসি, বরিশাল সরকারের পক্ষে এই আট শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। তার পূর্ব পাশে এই জমির অংশ পাঁচ শতাংশ জমি ছিল, যা তিন দিকে পাকা ওয়াল ছিল, ৩০-১৬ ফুট ছাদসহ পাকা স্থাপনা ছিল এবং একদিকে টিনের বেড়া ছিল, যা ৩ জানুয়ারি ও ৪ জানুয়ারি ভেঙে দিয়ে দখলে নিচ্ছে। দখলকৃত জমির পরিচয় ৪২ নং বানারীপাড়া মৌজায় ২৫৯ নং খতিয়ানের ৫২৫ নং দাগের অংশ। জমির পরিমাণ ৫ (পাঁচ) শতাংশ। জমির রেকর্ডীয় মালিক তার চাচাতো ভাই অনুপ কুমার গুহ, ও পল্লব কুমার গুহ।

 

 

এ বিষয়ে অনুপ কুমার গুহ বলেন, বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে পৈতৃক সূত্রে মালিকানাধীন দুই ভাইয়ের ১৩ শতাংশ জমি ছিল। এর মধ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন করার জন্য ২০২১ সালে সরকারের পক্ষে বরিশাল জেলা প্রশাসক ৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। বাকি ৫ শতাংশের ওপর একটি পাকা ভবন ছিল। যার সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়লে টিনের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দুই ভাইয়ের মালিকানা সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ডও ছিল। তিনি পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় যতদূর যাওয়া সম্ভব ততদূর যাবেন বলেও জানান।

 

 

মেঘনা গুহ ঠাকুরতার ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ঘটনার ব্যাখা দিয়েছেন। গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিতি বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানশিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক মাকছুদা আক্তারসহ অন্যান্য শিক্ষক,অভিভাবক ও শিক্ষিার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানশিক্ষক বলেন, বানারীপাড়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পৈত্রিক ভিটায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার’র তালিকাভুক্ত বিদ্যালয়টিতে সাধারণ ও কারিগরি শাখায় প্রায় ৮ শতাধিক ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। স্কুলটি কলেজে রূপান্তরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

 

 

এদিকে, বিদ্যালয়টির মূল গেট লাগোয়া পশ্চিম পাশে ১৯৬৬ সাল থেকে বানারীপাড়া ৭ নম্বর সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের ব্যবহৃত সম্পত্তি। পরবর্তিতে ডিক্রী বলে অনুপ কুমার বিশ্বাস ও তার ভাই পল্লব কুমার বিশ্বাসের মালিকানার ১৩ শতক সম্পত্তির মধ্যে ৮ শতক সম্প্রতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকার অধিগ্রহণ করে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য পুরনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করায় ক্রেতা উক্ত ভবনটি ভেঙে ফেলেন। উক্ত ৮ শতক জমি দেয়ার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন আরও প্রায় ২-৩ শতক জমি থেকে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ভাঙার ফলে বিদ্যালয়ের উক্ত অংশটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত জায়গাটুকু টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়।

 

 

প্রধানশিক্ষক সংবাদ সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে একটি প্রতারণা মামলায় ১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি অনুপ কুমার বিশ্বাস, পিতা প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস (মাখন বিশ্বাস) বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সুবিধালাভের জন্য নিজেকে গুহ পরিবারের সদস্য প্রমাণের ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বাস পদবীর সাথে গুহ পদবি ব্যবহার করে আসছেন। অনুপ কুমার বিশ্বাসের দাবিকৃত ওই সম্পত্তির আরও বেশ কয়েকজন মালিক দাবিদার বিদ্যমান রয়েছেন। এমতাবস্তায় প্রকৃত মালিক শনাক্ত করে ওই সম্পত্তির যথাযথ মূল্য পরিশোধ করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মত আছে।

 

 

অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শাহে আলম সাংবাদিকদের বলেন, অনুপ যে জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন সেই জমি বানারীপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের। সেখানে ১৯৬৬ সালে নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদের পাকা ভবন ছিল। ১৯৭৭ সালে অনুপের বাবা ভুয়া ডিক্রি করে ওই জমি তার নামে নিয়ে যান। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে হওয়ায় শিক্ষক-অভিভাবক সবাই চান জমিটা বিদ্যালয়ের থাকুক। এর সঙ্গে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জড়িত। জমির প্রকৃত মালিক হলে বাজারমূল্য অনুযায়ী বিদ্যালয় থেকে জমির মূল্য দেওয়া হবে।

 

 

তিনি বলেন, স্কুলের পুরো জায়গাটা মেঘনা গুহঠাকুরতার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোর্তিময় গুহঠাকুরতা দিয়েছিলেন। অনুপ শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার আত্মীয় পরিচয় দিলেও তিনি ওই পরিবারের আত্মীয় নন। অনুম কুমার তার নাম ব্যবহার করে সমস্যার সৃষ্টি করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা প্রয়োজনে মেঘনা গুহঠাকুরতার সঙ্গে কথা বলতে রাজি। ওনার সঙ্গে কথা বললে আর এমন সমস্যা থাকবে না বলে আমার বিশ্বাস।

 

 

প্রসঙ্গত, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পৈতৃক ভিটায় বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হলেও ভিপি ‘ক’ তালিকাভুক্ত হওয়ায় (ভিপি কেস নম্বর-৩৪০/১৯৬৯) জমির দানপত্র দলিল নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারের কাছ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ দশমিক ৭২ একর সম্পত্তি প্রতিবছর (একসনা) লিজ নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD